গাইবান্ধা-৫ আসনে উপনির্বাচনে ভোট বন্ধ করে দেয়ায় ক্ষোভ জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। এতে কেন্দ্রীয় নেতারাসহ স্থানীয় প্রার্থীরাও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। গতকাল ভোট বন্ধের পরে বিক্ষোভ করেছেন গাইবান্ধার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা।
ভোট বন্ধের পরে বুধবার বিকেলে বিক্ষোভ করে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাহমুদ হাসানের কর্মীরা।
এ বিষয়ে মাহমুদ বলেন, ‘আমি বা আমার নেতা-কর্মীরা এমন কোনো কাজ করিনি যা নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করেছে। পুরো বিষয়টিই আমার কাছে রহস্যময়। এটা পূর্বপরিকল্পিতভাবে ঘটানো হয়েছে। ’
এদিন বিকেলে সাঘাটা উপজেলার সাঘাটা-বোনারপাড়া সড়কের চৌমাথা মোড়ে অবস্থান নেয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। সেখানে বেশ কিছুক্ষণ অবস্থানের পর বিভিন্ন সড়কে বিক্ষোভ মিছিল করে তারা। এরপর উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে জড়ো হয় সবাই।
এদিকে নির্বাচন কমিশন (ইসি) কেন গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনের ভোট গ্রহণ স্থগিত করেছে, তা বুঝে উঠতে পারছেন না আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ। তিনি বলেন, এই নির্বাচনে কোনো কেন্দ্রে গোলযোগ হয়নি, এমনকি ন্যূনতম মারামারির ঘটনাও ঘটেনি। তারপরেও নির্বাচন কমিশনের ওই সিদ্ধান্তে অবাক হয়েছেন তারা।
প্রতিটি কেন্দ্রেই শান্তিপূর্ণ ভোট গ্রহণ চলছিল জানিয়ে হানিফ বলেন, ‘দলীয় নেতা-কর্মীদের কাছ থেকে টেলিফোন করে খোঁজ নিলাম। কোথাও কোনো অনিয়ম হয়েছে, এ রকম কেউ বলতে পারেননি। জেলা প্রশাসনে কথা বলেছি, সেখানেও কোনো তথ্য নেই। ’
অন্যদিকে, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেছেন, বর্তমান সরকারের অধীনে যে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হবে না, তা গাইবান্ধার উপনির্বাচন আবার প্রমাণ করেছে। গাইবান্ধার একটি আসনে উপনির্বাচনের ভোট করতে গিয়ে যে চিত্র দেখা গেছে, তা আগামী জাতীয় নির্বাচনেও ঘটবে।
বিরোধী দলীয় রাজনৈতিক দলগুলোর সমন্বিত জোট গণতন্ত্র মঞ্চ বলছে, নির্বাচনের আগে জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) দায়দায়িত্ব নির্বাচন কমিশন থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিয়ে যাওয়ার ঘটনাকে সরকারের নতুন এক অশুভ পরিকল্পনা। কার স্বার্থে এটা করা হচ্ছে সে প্রশ্নও তুলেছে তারা। সরকারের প্রতি এ সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
এদিন বিকেলে ভোট বন্ধের পরপরই এক বিবৃতিতে ইসিকে ধন্যবাদ জানায় জাতীয় পার্টি (জাপা)। ভোট বন্ধের পরেই বিকেলে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সাথে দেখা করতে যায় জাপার একটি দল। যেখানে প্রতিনিধিত্ব করেন জাপার চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জি এম) কাদের।
উল্লেখ্য, বুধবার (১২ অক্টোবর) নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় গাইবান্ধা-৫ (ফুলছড়ি-সাঘাটা) আসনের উপনির্বাচন বন্ধ করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে গাইবান্ধা-৫ আসনের ভোট পর্যবেক্ষণের মনিটরিং সেলে বসে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল নির্বাচন বন্ধের এ ঘোষণা দেন।
সিইসি বলেন, ‘ভোটের পরিবেশ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ভোটকেন্দ্রে অনেক অনিয়ম দেখা গেছে। গোপন কক্ষে একাধিক লোক প্রবেশ করেছে। পোলিং এজেন্টরা আচরণবিধি লঙ্ঘন করে একই পোশাক পরেছে। কিছু কিছু কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। ‘
বুধবার সকাল ৮টা থেকে গাইবান্ধা-৫ (ফুলছড়ি-সাঘাটা) আসনে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। ভোটগ্রহণ শুরুর পর থেকেই নির্বাচন কমিশন ভবনে সিসি ক্যামেরা কন্ট্রোল রুম থেকে ভোট পর্যবেক্ষণ করেন সিইসিসহ তিন কমিশনার। এ সময় সিসি ক্যামেরায় বিভিন্ন কেন্দ্রের অনিয়ম দেখা গেলে তাৎক্ষণিক ওই কেন্দ্রে ভোট স্থগিত করে দেওয়া হয়। এভাবে ৫১টি কেন্দ্রের স্থগিত করা হয়। অবশেষে পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকায় এ সিদ্ধান্ত নেয় ইসি।